ভারতে মেয়েদের বেকারত্ব কত? এই বছরের হিসেব বলছে ২২%। তার মানে আমাদের আশেপাশে যত কর্মক্ষম মহিলা আছেন, ধরে নিচ্ছি ১৪ বছরের উপরে আর ৬৫ বছরের নীচে, তাদের মধ্যে ৭৮% রোজগার করেন? এ যে অবিশ্বাস্য!! আসলে বেকারত্বের এই হিসেব স্রেফ লোক ঠকানো। যদিও অন্য একটি মাপক আছে যা সত্যের কাছাকাছি। যে হিসেব অনুযায়ী ভারতে কর্মরত মহিলা খুব বেশী হলে ৯ কোটি। একটু ব্যাখ্যা করা যাক।
রোজগার my choice!!
ভারতে মেয়েদের সংখ্যা এখন ৬৭ কোটি। যার মধ্যে ১৫ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে যারা অর্থাৎ কর্মক্ষম মহিলার সংখ্যা ৪৩ কোটি। প্রশ্ন হল এই ৪৩ কোটির মধ্যে কতজন রোজগার করেন? ৭৮% কি? মোটেই তা নয়। এই ৪৩ কোটির মধ্যে একটা অংশ আছেন যারা শ্রম শক্তির অন্তর্ভুক্তই নয়। যারা কাজ খোঁজেন না। যারা এক কথায় (অসুস্থ না হলে) গৃহবধু বা আজকের ভাষায় বললে হোমমেকার বা গৃহস্রষ্টা (যদিও মালিক না হয়ে কি করে স্রষ্টা হওয়া যায় জানা নেই)। এই অংশের মধ্যে আছেন গ্রামের সেই সব মহিলাও যাঁরা নিজের স্বামীর বা শ্বশুরের জমিতে (যদিও তারা বিশ্বাস করেন যে জমি তারই) কাজ করেন বা তাদের কোনো ব্যবসায় সাহায্য করেন। এই অংশটা ভারতে কত? সরকারি হিসেব বলছে কর্মক্ষম মহিলাদের মধ্যে ৭২%ই (স্বেচ্ছায়) কাজ করবেন না। যদিও আন্তর্জাতিক তথ্য বলছে সেটা ৮১%। যাই হোক দেশের সরকারি তথ্য নিয়েই এগোনো যাক। সুতরাং শ্রম শক্তির অন্তর্ভুক্ত হলেন মাত্র ১২ কোটি ইচ্ছুক মহিলা। এবার বেকারত্ব মাপা হবে এই ১২ কোটির মধ্যে। ১২ কোটির মধ্যে ২২%!! অর্থাৎ সংখ্যাটা দাঁড়াল ৩ কোটি!! প্রায় অপার্থিব পরিসংখ্যান, কিন্তু এটাই সত্যি। যদি কেউ দাবি করেন যে না ২২% টা আসলে হিসেব হয় ৪৩ কোটির মধ্যে তাহলেও সংখ্যাটা দাঁড়াল ৯ কোটি। তার বেশী কিছুতেই বাড়ানো যাচ্ছে না!! ৯ কোটি ধরলে, প্রতি পাঁচজন কর্মক্ষম মহিলার মধ্যে মাত্র একজন কাজ করেন। আর ৩ কোটি ধরলে গড়ে প্রতি সাত জন কর্মক্ষম মহিলার পাঁচ জন কাজ করতে চান না।
আর আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী ইওরোপ আমেরিকা রাশিয়া চীনের সাথে আমাদের তুলনা করছেন !! আমেরিকাতে গত বছরের হিসেব অনুযায়ী মহিলারা পুরুষদের ৮৩% রোজগার করে, আর ভারতে মোট শ্রম রোজগারের 83% করে পুরুষ আর 17% করে মেয়েরা।
সভ্যতার নিয়ম মানলে রোজগার শুধু অধিকার নয়, তা কর্তব্যও বটে। দেশপ্রেমের ন্যূনতম শর্ত দেশের কোষাগার বাড়ানো, পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ করা নয়। অথচ দেশের ৩১ কোটি মানুষের ইচ্ছাই করে না রোজগার করতে!! আর সেটাকেই দেশের, নারীর, মাতার, স্ত্রীর ঐতিহ্য বলে চালানো হচ্ছে! রোজগার by choice!! ?
দুয়ারে কাজ
দেশের ৩৩ কোটি কর্মক্ষম মহিলা বেকার হওয়ার এবং প্রতি পাঁচ জনে একজন মেয়ের কাজ করতেই না চাওয়ার কারণগুলি খুঁজতে সংগ্রামী মহিলা সমিতির একটা টীম তৈরি করে আমরা কয়েকজনের সাথে কথা বলেছিলাম। একটা প্রশ্নপত্র নিয়ে। আমরা বেছে নিয়েছিলাম বাংলার বাইরের ছয় টা রাজ্য থেকে আগত মহিলাদের, যাঁরা কয়েক দশক এই রাজ্যেই আছেন, শ্রম দিচ্ছেন।
পশ্চিম ভারতের একটি রাজ্যের এক মেয়ে পশ্চিমবঙ্গে বিবাহ সূত্রে এসেছেন কয়েক যুগ আগে। ধরা যাক, তার নাম পার্বতী। এখানে এসে তিনি রোজগার শুরু করলেন, সংসারের স্বচ্ছলতার প্রয়োজনে। বিশেষ লেখাপড়া জানা নেই। পার্বতী কে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে নিজের মেয়ের বিয়ে কেন তিনি নিজ রাজ্যে দেননি ? তিনি বললেন, তার স্বামীর তেমনই ইচ্ছা ছিল, কিন্তু তিনি নিজে এবং মেয়েও বেঁকে বসেছিল। সেখানে চাকরি রোজগার করতে তেমন কোনো বাধা নেই, কিন্তু কাজ থেকে ঘরে ফিরে বাড়ির সমস্ত কাজ, বেরোনোর আগে সমস্ত কাজ, পুজো ব্রত মহিলাদেরই সারতে হয়। এই সব ব্যাপারে পরিবারগুলি খুব কড়া। জল আনতে যেতে হয় বেশ দূরে। তুমি যদি স্বামীকে বাড়ির কাজে সাহায্য করতে বলো বা নিজে করে উঠতে না পারো তবে সেটা গর্হিত অপরাধ। ফলে মেয়েরা নিজেরাই রোজগার করতে দূরে যেতে ভয় পায়। বাড়ির কাছে কাজ খোঁজে। যদিও সংসারের স্বচ্ছলতার জন্য কাজ করতে বাধ্য হয় তারা। অর্থাৎ রোজগার বা কাজ যেন তাদের বোঝা। পার্বতীর বাপের বাড়িতে অনেক মেয়েই হীরে পালিশের কাজ করতেন। বললেন যে "হীরে পালিশের কাজ করে আমার মাসী অল্প বয়সেই অন্ধ হয়ে গেছে। শ্বশুরবাড়ি থেকে ফেরত দিয়ে গেছে। আমি আমার মেয়েকে অনেক দূর লেখাপড়া করিয়েছি। দেশে গিয়ে ওর সবচেয়ে অসুবিধা হয় সারাক্ষণ ঘোমটা দিয়ে থাকতে।"
অপর এক রাজ্যের এক মহিলার কথায় আসা যাক। তিনি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। বিবাহ হয় ওখানেই। স্বামীর রেলের চাকরি সূত্রে ভারতের বহু শহর ঘোরা হয়েছে এই লক্ষ্মীর। কলকাতা থেকেছেন আগেও ওই চাকরি সূত্রে, কিন্তু অবসরের পর কলকাতার উপকণ্ঠে একটি বাড়ি করে নিয়েছেন। জমি কিনে রেখেছিলেন ওই চাকরি করার সময়। কেন ফিরলেন না? তিনি স্পষ্টই বললেন, "বড়ই ঝঞ্ঝাট। মাঝে মধ্যে যাই, আনন্দ করে আসি। কিন্তু পাকাপাকিভাবে আর থাকা যাবে না।" তিনি বললেন- তার এক ছেলে এখন পূর্ব ইয়োরোপের বাসিন্দা। "সেই ছেলে যেমন আর কলকাতা ফিরতে চায় না, আমরাও আর দেশে (নিজ রাজ্যে) ফিরতে চাই না। জমি জায়গা আছে, ওখানে নিশ্চিন্তে থাকতেন, কিন্তু পারিবারিক অশান্তি লেগেই থাকবে। এখানে নিজের মত আছি ভালই আছি। বাজার থেকে মুলো শাক টমেটো কিনে খাই, তবু ভালো।" তারও ধর্ম ব্রত পালনের ঘটা নিয়ে আতংক। অল্প বিস্তর ব্রত উপোষ এখানে করে সেও। কিন্তু অত ঘটা তার পছন্দ নয়। তার বাপের বাড়িতে চিকনের কাজ হতো। এই কাজ মেয়েরাই করতো। লক্ষ্মীর কথাতেও সেই একই সুর। বাড়ির কাছেই কাজ পছন্দ ছিল সবার। রান্নাঘরে ডাল বসিয়ে কাজ করা যায়, বাচ্চাকে স্নান করিয়ে দেওয়া যায় ফাঁকে, শ্বশুর শাশুড়ি স্বামীকে খেতেও দেওয়া যায়। স্বামীর জমির কাজও একটু দেখভাল করে দিতে পারে। বাড়িতে অশান্তি কম হয়। কলকাতায় এসে তার আর বাড়ি থাকা হয়নি। ছেলে মেয়েগুলো যে কিভাবে এর তার কাছে থেকে মানুষ হয়ে গেল কে জানে। যেন আফশোষ, অপরাধ বোধের অনুভূতি শোনা যায় তার কণ্ঠে।
তৃতীয় এক রাজ্যে এই তৃতীয় মেয়েটির বাবার আদি বাড়ি, সেখানে জ্যাঠা কাকারা এখনো থাকেন। এমনই বাড়ির এই মেয়ে কলকাতায় জন্ম, এখন সে কলেজে পড়ছে, নাচ করে, অভিনয় করে। তার বাবা স্বজাতে বিয়ে করেনি বলে তাড়িয়ে দিয়েছিল ঠাকুরদা। এই মেয়ে কোনো পারিবারিক অনুষ্ঠানে সেই বাড়িতে যেতে ভয় পায়। কারণ তার বিয়ের বয়স নাকি পেরিয়ে যাচ্ছে বলে সাংঘাতিক চাপ সৃষ্টি চলে। রোজগার মেয়েরা করে নিতান্ত বাধ্য হয়ে, সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে। ফলে সচ্ছল ইঞ্জিনিয়ার ডাক্তার বিয়ে করলে আর মেয়েদের কাজ করতে হয় না। কিন্তু মেয়েদের নিজের চাকরির জন্য বুড়িয়ে যাওয়া পাগলামির লক্ষণ, বোঝায় তারা।
কলকাতায় বসবাসকারী আরও তিনজনের সাথে কথা বলেছে আমাদের টীম। তাদের তিনজনেরই আদি বাড়ি অন্য রাজ্যে। তিনজনই বলেছেন যে তারা বিয়ের আগে কর্মরত ছিলেন না, এখন সংসারের অভাব মেটাতে রোজগার করতে বাধ্য হয়েছেন। অর্থাৎ রোজগার একটা বোঝা।
সাধারণভাবে গুজরাট আর উত্তরপ্রদেশের মেয়েদের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে বেশ কিছু গবেষণাপত্রে। সেখানে দেখা যায় গ্রামীণ ক্ষেত্রে ছেলেরা মাসে গড়ে ২০ দিন কাজ পেলেও মেয়েরা পায় গড়ে ১২ দিন কাজ। মেয়েরা স্বেচ্ছায় কম সময়ের কাজ চায়। বস্ত্র শিল্পে যখন খুব উত্থান ঘটছিল, ২০১২ সালে ধরা যাক, তখন মেয়েরা অনেক বেশী কাজ পাচ্ছিলেন সেইখানে এবং মাইনের তফাত অনেক কম ছিল। একই কথা সত্যি নির্মাণ ক্ষেত্রেও। দুই রাজ্যেই তরকারিওয়ালি বা অন্য ফেরিওয়ালার কাজ মেয়েরা ছেলেদের থেকে কম করেন না। আবার গৃহপরিচারিকা সবটাই তাদের একাধিপত্য। দেখা যায় কম রোজগারের কাজগুলিতে মেয়েদের সংখ্যা বেশী। শিক্ষা কম, যোগ্যতা কম আর দূরে যাওয়ার মানসিকতা কম। বাড়ির কাছে কাজ মানে দরকষাকষির সুযোগ কম, প্রযুক্তিগত উন্নতির প্রয়োজন কম, প্রশিক্ষণের চাহিদা কম। সন্তানধারণের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত এখনো মেয়েদের হাতে নেই। মাতৃত্বকালীন ছুটি পাওয়া যায় না, পাওয়া গেলেও ৮০% ক্ষেত্রেই তা বেতনহীন। ফলে মেয়েরা স্থায়ী কাজে টিকতে পারে না, কম বেতনের রোজগারে থাকতে বাধ্য হয়। উপরন্তু সন্তান প্রতিপালনের একক দায় দায়িত্ব তাকে এমনভাবে বেঁধে রেখেছে যে সে কর্মক্ষেত্রে উন্নতির জন্য ঝাঁপাতে পারে না। এই দুই রাজ্যেই মেয়েদের উচ্চশিক্ষা না থাকলে তারা (উত্তরপ্রদেশ বা গুজরাতে) কাজ করেন হীরে পালিশ, জরির কাজ, বস্ত্র শিল্পে ফেরিওয়ালা বা নির্মাণ ক্ষেত্রে। উচ্চ শিক্ষা হলে (যদিও গত কয়েক বছরে অঙ্গনওয়াড়ির সহায়ক বা মিড ডে মিল রান্নার কাজেও দেখা যাচ্ছে উচ্চশিক্ষিত মহিলাদের) মেয়েরা ক্লার্কের চাকরি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তুলনায় বেশি কাজ করেন। সরকারি ক্ষেত্র যেমন ব্যাংক, পোস্ট আপিস ইত্যাদিতেও তাদের যেতে দেখা যায়। কিন্তু যতই উচ্চ শিক্ষিত হোন, সাধারণ প্রবৃত্তি হল বাড়ির পাশে চাকরি নেওয়া। ন্যূনতম মজুরি দাবি করার থেকে বাড়ির পাশে অর্ধেক মজুরিতে কাজ বেশি পছন্দ করে মেয়েরা।
তথ্য বলছে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির হিসেব রাখার কাজ মূলত ছেলেরাই করেন। ফলে তাদের ঋণ নেওয়ার গোটা প্রক্রিয়া নিজেদের হাতে থাকে না। ধূপ তৈরী করেন যে মহিলার আত্মীয়া , তিনি বলেন যে, এই কাজ বাড়ির কাছেই হয়, কিন্তু একটা ঘর থাকলে ভাল, কোমরে ব্যথা করে একটু গড়িয়ে নিলে ভাল হতো। গৃহপরিচারিকাদের ক্ষেত্রে মাসের কয়েকদিন বেশি ছুটি নিলেই কাজ চলে যাওয়ার বিপদ তৈরি হয়। অথবা বাৎসরিক বৃদ্ধির হার নিয়ে দরকষাকষি করতে অসুবিধা হয়। কিন্তু পরিবারে কারুর অসুখ করলেই তাকেই কামাই করতে হয়।
তাছাড়া Covid পরবর্তী ভারতে মেয়েদের কাজ যে আরো বহু চলে গেছে সেটা সরকারি ভীতিপ্রদ তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, কিন্তু বাস্তব চিত্র আরো ভয়ানক। কারণ গৃহ পরিচারিকা অনেকেই আবার নিযুক্ত হয়েছেন, কিন্তু তাদের দুই বছরের বেতন মার গেছে। কম বেতনের চাকরিতে রাখার মত ক্ষমতা ছোটো ব্যবসায়ী মালিকদেরও ছিল না। আবার স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বহু মহিলা কাজ করেন। তাদের উপর অমানুষিক চাপ গেছে ওই পর্যায়ে। যার ফলে অনেকেই কাজ ছেড়ে দিয়েছে। এটিও অন্য আলোচনা।
কেন্দ্রীয় সরকার তাদের স্বভাব দোষে "অচ্ছে দিনের" গল্প শুনিয়েছে। মেয়েদের নিজেদের পায়ে দাঁড় করানোর জন্য অনেকগুলি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলা হয়েছে। যেমন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র বাড়ানো, মাতৃত্বকালীন ছুটি ও ভাতা বৃদ্ধি, সস্তায় ঋণ পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা, সেলফ হেল্প গ্রুপ, সেওয়া বা সঙ্গিনী গ্রুপ বাড়ানো, ১০০ দিনের কাজের নিশ্চয়তা, খাদ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা ইত্যাদি। একটা প্রস্তাবও ভুল নয়, কিন্তু বিজেপি জানে একটাও তাদের করার ইচ্ছে বা ক্ষমতা নেই। তাহলে? দুনিয়ার সামনে কত, আর কত, নিজের মুখ পোড়াবেন প্রধানমন্ত্রী?
বিজেপির সাংস্কৃতিক বিপ্লব
মেয়েদের পশ্চাদপদতাকে উস্কে দিচ্ছে বিজেপি। প্রগতিশীল সমাজ, বিজেপির ভাষায় যারা আর্বান নক্সাল, চাকরি বাধ্যতামূলক করতে চায়। সংসার করার অধিকার বা সুখ থেকে মেয়েদের সরিয়ে দিতে, বঞ্চিত করতে চাইছে তারা। হিন্দু রাষ্ট্র হলে আর সেই ঝক্কি নেই, মেয়েরা না চাইলে কেউ তাদের জোর করে কাজ পাঠাবে না। বরং তাদের ঘরে থাকার আনন্দকেই সম্মান জানাবে সরকার। ব্রত উপোষ ইত্যাদিতে মন দেওয়ার মধ্যেই মেয়েদের মুক্তি ঘটবে। বেটি নিজে পড়বে চাকরির জন্য নয়, নিজের বেটিকে ঘরে পড়ানোর জন্য। কারণ মোদিজি জানেন যে যদি সত্যিই ৪৩ কোটি মহিলা ন্যুনতম মজুরি নিয়ে রোজগার করতে চাইতেন বাস্তবে হোমমেকার পদটার প্রয়োজনও ফুরিয়ে যেত। অথবা হোমের মালিক হয়ে ছেলে মেয়ে দুজনেই সেই হোমের মেকার হতেন। সে প্রসঙ্গ আজ থাক।
সাংস্কৃতিক আক্রমণ, মতাদর্শগত আক্রমণ করে মেয়েদের ঘরে ফেরত পাঠানোর ইতিহাস আগেও আছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে ইওরোপ জুড়ে যে মহিলারা কাজে বেরোতেন তারা অধিকাংশ নিযুক্ত হতেন গৃহ ভৃত্য, দর্জি, শিক্ষিকা, লণ্ড্রি, খনি আর সেলসের কাজে। যুদ্ধ শুরু হতেই ছেলেদের অভাবে এবার সব ধরনের কাজে নিযুক্ত হতে শুরু হলেন মেয়েরা। যদিও দক্ষতা ও কম সময়ের অজুহাত দেখিয়ে বেতন কম দেওয়া হল। যুদ্ধ শেষ হতেই কিন্তু মেয়েদের উৎসাহ দেওয়া হল ঘরে ফেরত যেতে। বিবাহিতা মহিলাদের জবরদস্তি ছাঁটাই করা হল। পরিবারে ফেরার গুরুত্ব, মাহাত্ম্য বুঝিয়েই নিশ্চয়ই এই কাজ করতে হয়েছে শাসকদের। সেরকম সিনেমা, সেরকম সাহিত্যের বাড়বাড়ন্ত হয়েছে। যদিও নারী আন্দোলনের দ্বিতীয় ঢেউ এই প্রচারকে মোকাবিলা করেছিল। একই কাণ্ড দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরেও হয়েছিল।
ফলে মোদি সরকারেরও প্রয়োজন আবার সেই সাংস্কৃতিক মতাদর্শগত আক্রমণ করার। মেয়েদের উপর যৌন নিপীড়ন সবচেয়ে বেশি হয় পরিবারের অভ্যন্তরে। কিন্তু রাস্তায় বেরিও না। আর রাস্তায় ধর্ষণ হলে সে দায়িত্ব সরকারের নয়। ধর্ষকদের গলায় মালা পড়িয়ে থাকেন তাদের নেতা কর্মীরা। বিজেপি পরিবারের পবিত্রতার নামে সমাজ জুড়ে রাজতন্ত্র এবং জমিদারতন্ত্রের নারকীয় ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনবে। অর্থনীতিতে oligarchy, সমাজনীতিতেও তারই প্রতিফলন। শিল্পপতিরা জানে যে সস্তায় খাটাতে হলে মেয়েদের সংসারে, ঘোমটায়, ধর্মে চুবিয়ে রাখতে হবে।
হোমমেকার নই, আমরা বেকার
সাকার বলতে না পারি, নিজেদের অন্তত বেকার বলতে চাই। সরকারি বেসরকারি যে কোনো ফর্মে বেকার লেখার সুযোগ ও সম্মান দিতে হবে মেয়েদের। প্রফেশান জিজ্ঞেস করলে নিজেকে গৃহবধূ/ হোমমেকার ইত্যাদি বলার অসম্মানজনক অভ্যেস আমাদের নিজেদেরই বদলাতে হবে। আজ মেয়েদের এটাও বলার সময় এসেছে যে বিবাহ না করেও বা মা না হয়েও থাকা যায়, কিন্তু স্বাধীন রোজগার না করলে জীবন বৃথা।
আমাদের দাবি :--
১) পুরুষ এবং নারী দুই ক্ষেত্রেই রোজগার বাধ্যতামূলক করতে হবে।
২) সরকারি ফর্মে হোমমেকার অপশনের পাশাপাশি বেকার লেখার অপশনও রাখতে হবে।
অভিনন্দনসহ---
নেহাই
Cestuss
সংগ্রামী মহিলা সমিতি
ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি
৮ই মার্চ,২০২৩
===============================