http://prehistory সমাজ বিকাশের প্রাগৈতিহাসিক স্তরের কথা (প্রথম পর্ব)
দেবদীপ সিংহ
প্রাণী বা উদ্ভিদ জগতের যেমন বিবর্তন আছে, আছে পুরনো প্রজাতির অবলুপ্তি ও নতুন প্রজাতি সৃষ্টির ঘটনা; মানব সমাজের ক্ষেত্রেও তেমনি আছে বিকাশ, আছে পুরনো সমাজের অবলুপ্তি ও নতুন ধরনের সমাজ পত্তনের ঘটনা। প্রথমটাকে আমরা যদি বলি জীব-বিবর্তন তাহলে পরেরটাকে বলা যায় মানুষের সাংস্কৃতিক বিবর্তন। জীব বিবর্তন বোঝার জন্য বিজ্ঞানীরা সংগ্রহ করেন পুরনো জীবাশ্ম, সাংস্কৃতিক বিবর্তন বুঝতে সংগ্রহ করা হয় মানুষের ফেলে আসা হাতিয়ার, বানানো ও ব্যবহার করা নানা জীবনোপকরণ। জীব-বিবর্তনের ক্ষেত্র পাওয়া যায় জীবন্ত জীবাশ্ম, সাংস্কৃতিক বিবর্তনের ক্ষেত্রে পাওয়া যায় এখনো পুরনো জীবনপ্রণালী বহন করে চলেছে এমন মানব দল। প্রথমটার ডাইনামিক্স আবিস্কারের কৃতিত্ব যদি হয় ডারউইনের বা যৌথভাবে ডারউইন-ওয়ালেসের তাহলে পরেরটার ডাইনামিক্স আবিস্কারের কৃতিত্ব অবশ্যই মার্কসের বা যৌথভাবে মার্কস-এঙ্গেলসের।
সাংস্কৃতিক বিবর্তনের মূল কথাটা হলো প্রকৃতির কর্তৃত্ব থেকে বেরিয়ে এসে, জৈবিক অস্তিত্বের উর্ধ্বে উঠে পৃথিবীর বুকে টিকে থাকার কৃত-কৌশল আয়ত্ত করা। এইভাবে পৃথিবীর বুকে টিকে থাকতে বিভিন্ন জীবন প্রণালী বা সংস্কৃতি মানুষ গড়ে তুলেছে যা মানব সমাজের বিকাশের ইতিহাসের একেকটা স্তরের সাথে সংশ্লিষ্ট ও সেই ইতিহাসের গতিপথে পরস্পরের সাথে সংযুক্ত। কোন একাটা যুগে বেঁচে থাকার জন্য মানুষ কি দিয়ে ও কিভাবে প্রকৃতির বুক থেকে তার রসদ সংগ্রহ করছে তার উপর নির্ভর করে এই স্তরগুলিকে চিহ্নিত করা যায়। ইতিহাসের গতিপথে উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত হাতিয়ারগুলোর উন্নতির সাথে সাথে বদলে যায় মানুষের বৈষয়িক উৎপাদনের ধরণ, তেমনি তার সাথে সাযুজ্য রেখে বদলে যায় মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক, তার সমাজ ব্যবস্থা, ধ্যান-ধারণা। পুরনো ব্যবস্থাকে হটিয়ে আসে নতুন সমাজ , যার জন্যও আবার অপেক্ষা করে থাকে একই পরিণতি।
প্রাগিতিহাস পর্যায়ে মানুষের সাংস্কৃতিক বিকাশকে বোঝার জন্য প্রথমে দরকার ছিল তার স্তর বিভাগ করার। বিজ্ঞানের যে কোন শাখার প্রাথমিক পর্যায়ে বর্গীকরণের কাজটার গুরুত্ব অপরিসীম। জীব বিবর্তনের প্রশ্নে উদ্ভিদ ও প্রাণীর বর্গ-বিন্যাস কাজটার ভূমিকার কথা মনে রাখলে বিষয়টা সহজেই বোঝা সম্ভব। প্রাগিতিহাস পর্যায়ে মানুষের সমাজের ক্ষেত্রে এই স্তর বিন্যাসের কাজটি অনেকটা সুসংহত ভাবে প্রথম করেন নৃবিজ্ঞানী হেনরি লুইস মর্গান। তিনি সমাজ বিকাশের ইতিহাসকে বন্যদশা, বর্বরদশা ও সভ্যতা এই ভাবে ভাগ করেন। এঙ্গেলস সেই স্তর বিভাগকে মেনে নিয়ে যোগ করেন:
" বন্যাবস্থা: এ পর্বে অবিলম্বেই ব্যবহার্য প্রাকৃতিক সম্পদগুলির আহরণই প্রাধান্য ছিল, মানুষের তৈরি জিনিস বলতে মূলতঃ ছিল সেই আহরণে সাহায্য করার মতো হাতিয়ার।
বর্বরতা: এ পর্বে গোপালন ও কৃষির প্রচলন হয় এবং মানুষের ক্রিয়া দ্বারা প্রকৃতির উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াবার পদ্ধতিগুলি আয়ত্তে আসে।
সভ্যতা: এ পর্বে প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ে আরো উন্নততর প্রক্রিয়া এবং যথার্থ শ্রমশিল্প ও কলার জ্ঞান অর্জিত হয়েছে।”
(সূত্র- পরিবার,ব্যক্তিগত মালিকানা ও রাষ্ট্রের উৎপত্তি - ফ্রেডরিক এঙ্গেলস)
ঐতিহাসিক বস্তুবাদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এঙ্গেলস এই স্তর বিভাগের ক্ষেত্রে মাপকাঠি করলেন বৈষয়িক সম্পদ উৎপাদনের ধরণ ও প্রকৌশলগত উন্নতির উপর। ফলে মর্গানের স্তর বিন্যাসের মধ্যে যেটুকু অসুবিধা ছিল সেটা দূর হয়ে গেল। আধুনিক নৃতত্ত্বের পরিভাষায় বন্যদশা বলতে বোঝায় শিকারি ও সংগ্রাহকদের জীবন। প্রত্নতত্ত্বের দিক থেকে দেখলে এই সময়টা মূলত পুরা প্রস্তর যুগের অন্তর্গত। বর্বরদশার সাথে সংশ্লিষ্ট সংস্কৃতি হল প্রাথমিক কৃষি ও পশুপালকদের জীবন। নব্য প্রস্তর যুগ থেকে এই স্তরের সূচনা, যখন সরল হাতিয়ারের ব্যবহারে কৃষিকাজ করা হতো, জমি উদ্ধার করা হতো গাছ-গাছালি কিছুটা কেটে ও বাদবাকিটায় আগুন লাগিয়ে। কিছু বছর পর যখন জমি আর চাষের উপযুক্ত থাকতো না তখন আবার নতুন করে জমি উদ্ধার করা হতো। এই সময় মানুষ পশুকে পোষ মানাতে ও ফলনশীল শস্যের কৃত্রিম নির্বাচন করতে শেখে। পশ্চিমের দেশগুলোর উপনিবেশ বিস্তারের আগে পৃথিবীর নানা জায়গায় এই ধরনের সমাজ টিকে ছিল। সভ্যতার সূচনা হয় কৃষির আরও উন্নত স্তরে নগর কেন্দ্রিক জীবনের শুরুর সময় থেকে।
নগর সভ্যতায় প্রবেশ করার আগে পর্যন্ত লিপির আবিস্কার হয়নি, ফলে মানুষের সমাজের প্রথম যে দুটি দশার কথা উপরে বলা হল তাদের সমকালে লিখিত নথি পাওয়া যায় না। ইতিহাস রচনার প্রধান যে উপাদান তা না থাকায় এই পর্যায়কে বলা হয় মানুষের প্রাগিতিহাস। মানুষের এই প্রাগিতিহাসকে জানা আমাদের কাছে নিছক কোন খামখেয়ালী কৌতুহল নয়, এর দায় আমাদের কাছে অন্য। মানুষের দ্বারা মানুষের শোষণ, রাষ্ট্রীয় পীড়ন বা শৃঙ্খলিত নারীর অবস্থা- এ সব কিছু থেকে মুক্তির প্রশ্ন যখনই ওঠে তখনই চেষ্টা হয় এসবের দায় মানুষের প্রকৃতির উপর ঠেলে দেওয়ার। ধর্মের মোড়কে ভাববাদ মানুষকে দেখেছে “আধা পশু আধা দেবশিশু” হিসাবে আর যান্ত্রিকতার কবলে থাকা বস্তুবাদ মানুষকে মনে করেছে যন্ত্র, নয়তো তাকে নামিয়ে এনেছে নিছক পশুর স্তরে।
শেষোক্ত চিন্তা দুটির আধুনিক রূপ হল বিহেভিয়ারিসম ও সোশিও-বায়োলজি। এসবের বিপরীতে মার্কসবাদ দেখায় সামাজিক সমস্যাবলীর সৃষ্টি মানুষের ইতিহাসে, যে ইতিহাসকে মার্কস-এঙ্গেলস দেখেছিলেন প্রকৃতির ইতিহাস ও প্রাণের ইতিহাসের ধারাবাহিকতায়। ইতিহাসের এই ধারাবাহিকতার সৃষ্টি হলেও আগমণের পর থেকেই মানুষ কিন্তু যে বাস্তব পরিস্থিতি বা পরিবেশের মধ্যে তার আবির্ভাব তার সাথে মিথস্ক্রিয়ায় রত হয়। এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে একদিকে সে বদলায় তার পরিবেশকে, অন্যদিকে বদলে যায় সে নিজেও। তাই মার্কসবাদ দেখায় মানুষের শাশ্বত প্রকৃতি বলে কিছু হয় না। ফলে সমাজ উদ্ভুত মৌলিক সমস্যাগুলোর দায় মানুষের মজ্জাগত কোন প্রকৃতির উপর চাপানো যায় না। এগুলোর সৃষ্টি মানব সমাজের ইতিহাসে, এর থেকে মুক্তির আগলও তাই সেই সমাজকে পরিবর্তনের মধ্যে দিয়েই খুলতে হবে। এই আগল খোলার দায় থাকলে মানুষের প্রাগিতিহাসকে বোঝারও হয়তো দরকার আছে।
মানুষের প্রাগিতিহাসের দুটি স্তরের কথা বলছিলাম। বর্তমান পর্বে আমরা শুধুমাত্র প্রথম স্তরটি সম্পর্কে কিছু কথা জানার চেষ্টা করব।
শিকারি-সংগ্রাহকদের কথা:
নির্দিষ্ট করে বলা না গেলেও, পৃথিবীর বুকে আধুনিক মানুষের আগমন আনুমানিক অন্তত দুই লক্ষ বছর আগে ধরা যায়। ' অ্যানাটমিক্যালি মডার্ন হিউম্যান ' এর এখন পর্যন্ত সবচেয়ে পুরনো জীবাশ্ম পাওয়া গেছে মরক্কোর জেবেল ইরহুডে- ৩ লক্ষ ১৫ হাজার বছর আগে। আর ইথিওপিয়া থেকে পাওয়া গেছে ১ লক্ষ ৯৫ হাজার বছর আগের জীবাশ্ম। এই সময় থেকে আনুমানিক আজ থেকে ১০ হাজার বছর আগে চাষবাস শেখার আগে পর্যন্ত যে দীর্ঘ সময় সেই পুরো সময়টা জুড়ে মানুষ ছিল শিকারি ও সংগ্রাহক। তাই বলা যায় পৃথিবীতে মানুষের টিকে থাকার মোট সময় কালের ৯৫ শতাংশেরও বেশি সময় ধরে সে ছিল শিকারি ও সংগ্রাহক। তখন এটাই ছিল তার বেঁচে থাকার একমাত্র পদ্ধতি। এই পর্যায়ে উৎপাদনের চেয়ে প্রকৃতির বুক থেকে প্রয়োজনীয় জিনিস জোগাড় করার উপর নির্ভর করেই চলতো মানুষের জীবন, উপকরণ বলতে ছিল এই ধরণের সংগ্রহ ও শিকারের কাজে লাগে এমন হাতিয়ার যা মূলত ছিল পুরা-প্রস্তর যুগ (Palaeolithic)-এর অন্তর্গত।†
বিবর্তনের ধারায় পৃথিবীর বুকে আধুনিক মানুষের প্রথম আগমন ঘটে আফ্রিকায়। এরপর আফ্রিকা মহাদেশের বাইরে তাদের প্রথম সফল পরিযান ঘটে আনুমানিক ৭০ হাজার বছর আগে। মধ্য প্রাচ্যে মানুষ পৌঁছায় ৬৫ হাজার বছর আগে, অস্ট্রেলিয়ায় ৪০ হাজার বছর আগে ও ইউরোপে ৩০ হাজার বছর আগে। সব শেষে সে পা রাখে আমেরিকায়, আজ থেকে আনুমানিক ১৪ হাজার বছর আগে। ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে মানুষ ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র। বিভিন্ন অঞ্চলের মানব দলগুলো বহু হাজার বছরের জন্য পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আঞ্চলিক পরিবেশের মধ্যে বেঁচে থাকার তাগিদে আলাদা আলাদা এলাকার মানব দলগুলো নিজেদের মতো সংস্কৃতি গড়ে তোলে, তাদের মুখের ভাষা আলাদা হয়ে যায়। সামান্য কিছু বংশগত শারীরিক বৈশিষ্ট্য এক একটি অঞ্চলের মানব দলের মধ্যে কিছুটা বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠে, যেমন চুলের ধরণ, চোখের মণি বা ত্বকের রঙ, গড় উচ্চতা ইত্যাদি, কিন্তু তা সত্ত্বেও সব দলই একই প্রজাতির অন্তর্গত। কিছু শারীরিক বা সাংস্কৃতিক বিশেষত্বের জন্য বিশেষ কোন অঞ্চলের মানব গোষ্ঠী প্রকৃতিগত ভাবেই উন্নত বা অনুন্নত এমন ধারণা একেবারেই সঠিক নয়। যে কোন মানব দল অন্য যে কোন মানব দলের ভাষা বা সংস্কৃতি আয়ত্ত করতে পারে এবং তা করেও থাকে।
এখন এই যুগ সম্পর্কে জানার জন্য প্রত্নতাত্ত্বিক নৃতাত্ত্বিকরা সংগ্রহ করেন পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পাথরের নানান হাতিয়ার, পুরনো জীবাশ্ম, কঙ্কাল মানুষের ব্যবহৃত নানান সামগ্রী। এই ধরণের উপাদান খুবই কম মেলে আবার এর থেকে সেই সময়ের মানুষদের সম্পর্কে বেশ কিছু বিষয় জানা গেলেও বহু কিছুই অজানা থেকে যায়। জানা যায় না কিভাবে তারা দিনগুজরান করতো, তাদের সমাজ সংগঠন কেমন ছিল, পরিবারের রূপ কেমন ছিল বা কেমন ছিল তাদের চিন্তা ভাবনা। অতীতের শিকারি সংগ্রাহকদের জীবনকে বুঝতে তাই জানার চেষ্টা করা হয় আজও পৃথিবীর আনাচে কানাচে টিকে থাকা শিকারি সংগ্রাহকদের জীবনকে। আগেই বলেছি, আজ থেকে প্রায় ১০ হাজার বছর আগে নব্য প্রস্তরযুগ (neolithic)-এ মানুষ প্রথম কৃষিকাজ শেখে; যার ফলে এই সময় থেকে কিছু মানব দলের ক্ষেত্রে জীবনপ্রণালীর পরিবর্তন ঘটে যায়। কিছু অঞ্চলের মানবদল প্রকৌশলের কিছু পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম হয় ও কৃষি নির্ভর অন্য ধরনের জীবনের দিকে চলে যায়। তবে পৃথিবীর নানা স্থানে সকল মানবদল একই সময় আগের স্তর অতিক্রম করেছে এমন নয়। কিছু মানবদল আজও পুরনো জীবনপ্রণালী বহন করে চলেছে। আজ থেকে ১০ হাজার বছরের আগে পৃথিবীর মোট এক কোটি জনসংখ্যার পুরোটাই ছিল শিকারি-সংগ্রাহক, সাড়ে তিন হাজার বছর আগে যখন পৃথিবীর জনসংখ্যা দাড়াঁয় ৩৫ কোটি, তখন শিকারি-সংগ্রাহকদের সংখ্যা ছিল ৩৫ লক্ষ (মোট জনসংখ্যার ১%), আর ১৯৭২ সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা যখন ৩০০ কোটি তখন শিকারি-সংগ্রাহকদের সংখ্যা হয় ৩০ লক্ষ (মোট জনসংখ্যার ০.০০১%)। কিছু দিন আগে পর্যন্তও শিকারি সংগ্রাহক স্তরেই আটকে থাকা মানুষের খোঁজ পাওয়া গেছে অস্ট্রেলিয়ার প্রত্যন্ত এলাকায়, দক্ষিণ আফ্রিকার কালাহারি মরুভূমিতে, উত্তর কানাডার বনাঞ্চল ও মরুভূমি এলাকায়, পশ্চিম আমেরিকার মালভূমিতে, দক্ষিণ আমেরিকার একেবারে দক্ষিণে, মেরু প্রদেশে এবং দক্ষিণ এশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার দ্বিপভূমি ও অরণ্যাঞ্চলে। আজকের সময়ে এই শিকারি-সংগ্রাহকদের জীবন সম্পর্কে যে তথ্য পাওয়া গেছে তার থেকে, পুরোটা না হলেও, আমরা অনেকটাই অনুমান করতে পারি অতীতকালে কেমন ছিল আমাদের জীবন। এদের সমাজকে নৃতাত্ত্বিকরা বলে থাকেন ব্যান্ড সোসাইটি। পৃথিবীর নানা স্থানে টিকে থাকা এই ধরণের সমাজ সংগঠনগুলোর মধ্যে খুঁটিনাটিতে অনেক বৈচিত্র থাকলেও কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট সকলের মধ্যেই আছে। কিছু উদাহরণের নিরিখে সেই সাধারণ বৈশিষ্ট্যের দিকটিই এবার আমরা দেখে নেব।
( ক্রমশঃ)
† পুরা প্রস্তরযুগ একটা দীর্ঘ সময়; এর তিনটি ভাগ: ১) নিম্ন (Lower palaeolithic): এর অন্তর্গত তিনটি ইন্ডাস্ট্রি, ক) অলডোয়ান (Oldowan), খ) পেবেল ফ্লেক (Pabble flake), গ) আকুলিয়ান (Acheulean); ২) মধ্য (Middle palaeolithic): এর আবার দুটো ইন্ডাস্ট্রি, ক) ফ্লেক ব্লেড (Flake blade), খ) লেভালোইস (Levallois); ৩) উচ্চ (upper palaeolithic): যার অন্তর্গত ইন্ডাস্ট্রি হলো বেকড ব্লেড (Backed blade)।
আবার নৃতত্ত্বের দিক থেকে দেখলে এই শিকারি-সংগ্রাহক জীবন প্রণালীর মধ্যে দিয়ে শুধু আধুনিক মানুষ (Homo sapiens) গেছে তা নয়, হোমো গণের অন্যান্য প্রজাতিরাও ছিল শিকারি ও সংগ্রাহক বা শুধুই সংগ্রাহক , যাদের কেউ কেউ পুরা প্রস্তরযুগের নিন্ম ও মধ্যবর্তী স্তরের হাতিয়ার তৈরী ও ব্যবহার করেছে। তবে তাদের কেউ পুরা প্রস্তরযুগের উচ্চ স্তরের হাতিয়ার সৃষ্টি করতে পেরেছে এমন নিদর্শন পাওয়া যায়নি। এই পুরা প্রস্তরযুগেই হোমো গণের অন্যান্য প্রাণীদের থেকে বিবর্তের মধ্যে দিয়ে আধুনিক মানুষের (Homo sapiens) সৃষ্টি হয়েছে। আধুনিক মানুষ ও হোমো গণের অন্যান্য কিছু প্রজাতি একই সময়ে পৃথিবীর বুকে বহু হাজার বছর পাশাপাশি বাস করেছে। একটা সময়ের পর, আনুমানিক আজ থেকে ৩৫ হাজার বছর, থেকে হোমো গণের মধ্যে শুধু একটি প্রজাতি, আধুনিক মানুষ, টিকে আছে। অন্যরা বিলুপ্ত হয়েছে। হোমো গণের প্রথম প্রজাতির নাম হল হ্যাবিলিস, আনুমানিক ২০ লক্ষ বছর আগে এদের আগমন বলে মনে করা হয়। হোমো গণের প্রাণীদের বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে আনুমানিক ২ লক্ষ বছর আগে এসেছে আধুনিক মানুষ।
হোমো হ্যাবিলিস