স্বামী বিবেকানন্দের বিজ্ঞানভাবনা

By : শিবাশীষ বসু | : 11 November, 2021
স্বামী বিবেকানন্দের বিজ্ঞানভাবনা

              

বছর পাঁচেক আগের কথা। সালটা ২০১৩। স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে অর্থাৎ ১২ই জানুয়ারী একটি বামপন্থী দলের দৈনিক মুখপত্রে বেশ ঘটা করে প্রকাশিত হল 'বিবেকানন্দের বিজ্ঞানচিন্তা' শীর্ষক একটি প্রবন্ধ।[১] লেখক জনৈক জলধর মল্লিক। প্রবন্ধটিতে লেখক বিবেকানন্দের বাল্যকাল থেকেই তাঁর বিজ্ঞানমনস্কতার কিছু নিদর্শন তুলে এনেছেন। যেমন, "পড়াশোনা ছাড়াও বহু বিজ্ঞানী ও প্রগতিশীল চিন্তায় ঋদ্ধ মনীষীদের সঙ্গলাভ বিবেকানন্দের সন্ন্যাসপূর্ব জীবনকাল থেকেই যুক্তিবাদী মন গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে।" "সম্ভবত বিবেকানন্দই হলেন প্রথম ভারতীয় সন্ন্যাসী যিনি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যুক্তিবাদের ভিত্তিতে আধ্যাত্মিকতাকে বিশ্লেষণ করার, ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন।" "ডারউইনের ক্রমবিবর্তনবাদ সম্পর্কে তাঁর বক্তব্যগুলিতে মৌলিক চিন্তাশক্তির পরিচয় পাওয়া যায়।" ..... ইত্যাদি, ইত্যাদি। কোনো বাজারচলতি বিনোদনমুলক পত্রিকা বা কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মুখপত্রে যদি এই প্রবন্ধটি পড়তাম, তাহলে এত চিন্তাভাবনা করবার প্রয়োজন ছিল না। যেহেতু প্রবন্ধটি ছাপা হয়েছে একটি ঘোষিত বামপন্থী পত্রিকাতে, সেহেতু স্বাভাবিক বোধ এটাই বলে যে পত্রিকার পত্রিকার পরিচালকবর্গ নিশ্চয়ই প্রবন্ধলেখকের সাথে সহমত, বা অন্তত তাঁর বক্তব্যের কট্টর বিরোধী নন।

চিন্তাটা এখানেই। সত্যিই কি বিবেকানন্দের চিন্তাধারা এমনই যুক্তিনিষ্ঠ ও বিজ্ঞানমনস্ক, যেমনভাবে তাঁকে হাজির করা হচ্ছে? নাকি এসব লেখার মধ্যে দিয়ে বিবেকানন্দের বিজ্ঞানমনস্কতার চেয়ে লেখকের অবিজ্ঞানমনস্কতাই বেশি করে প্রতিফলিত হচ্ছে? সেইজন্য বিবেকানন্দের বিজ্ঞানচিন্তা সম্বন্ধে আমাদের অবহিত হওয়া একান্তই প্রয়োজন। বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে গেলে আমাদের ফিরে যেতে হবে উনবিংশ শতকের মধ্যভাগে যখন থেকে ভারতে প্রগতিশীল চিন্তাধারার একটা জোয়ার এসে যায়। হিন্দু ধর্ম থেকে বেরিয়ে গিয়ে ব্রাহ্মসমাজের সৃষ্টি হয় যা অনেকাংশেই ছিল তুলনামূলকভাবে আধুনিক খ্রীষ্টান ধর্ম দ্বারা প্রভাবিত। শিক্ষিত বাঙালীরা দলে দলে ব্রাহ্মসমাজে যোগদান করতে থাকেন। শিক্ষিত বাঙালীর অপর এক অংশ ডিরোজিওর পদাঙ্ক অনুসরণ করে নাস্তিক্যদর্শনের অনুগামী হতে থাকেন। যাঁরা যোগ দেননি তাঁরাও বিদ্যাসাগরের নেতৃত্বে এবং প্রভাবে হিন্দুধর্মের বিভিন্ন অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে থাকেন এবং সমাজসংস্কারে ঝাঁপিয়ে পড়েন।.ঠিক এই সময় থেকেই শিক্ষিত বাঙালীর মানসে তৈরি হল আধুনিক বিজ্ঞানকে আপন করে নেওয়ার একটা প্রচেষ্টা। এই প্রসঙ্গে বিদ্যাসাগরের বেদান্তদর্শন আর সাংখ্যদর্শনকে "false system of philosophy"[২] অভিহিত করে তদানীন্তন শিক্ষাব্যবস্থায় মিল ও বেকনীয় দর্শনকে আবাহন করবার ঘটনাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিদ্যাসাগর অনুভব করতে পেরেছিলেন যে ভ্রান্ত ভারতীয় দর্শন আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে না। একই সময় শুরু হয় প্রথমে মহেন্দ্রলাল সরকার, অক্ষয়কুমার দত্ত এবং পরে রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর নেতৃত্ব কিছুটা হলেও আধুনিক বিজ্ঞানচর্চার। ঠিক তেমনই এক যুগসন্ধিক্ষণে আবির্ভাব হল স্বামী বিবেকানন্দের যিনি ক্রমেই বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে আসা বাঙালীর সাংস্কৃতিক চেতনার সামনে আধ্যাত্মিকতার দেওয়াল তুলে সবচেয়ে বড় বাধাটির সৃষ্টি করলেন।

বিবেকানন্দের টার্গেট অডিয়েন্স ছিল শিক্ষিত ভারতীয় বিশেষত শিক্ষিত বাঙালী। তাই অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সাথে বিবেকানন্দ সরাসরিভাবে বিজ্ঞানের বিরোধিতা করলেন না; বরং তার সাথে ভ্রান্ত বেদান্তদর্শনের একটি ককটেল তৈরি করে আমাদের পরিবেশন করলেন। বিদ্যাসাগর চেয়েছিলেন বেদান্ত আর সাংখ্যদর্শনের ভ্রান্ত পথ পরিহার করে মিল ও বেকনীয় দর্শনের পথে ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষাব্যবস্থা। কিন্তু বিদ্যাসাগরের সম্পুর্ন বিপরীত পথে হেঁটে বিবেকানন্দ বললেন, ভারতের প্রাচীন সাধকরা আধুনিক বিজ্ঞানের সবকিছু তত্ত্বই জানতেন, বিজ্ঞানীদের কাজ হল স্রেফ সেগুলিকে খুঁজে বার করা। কারন বেদান্ত ও সাংখ্যদর্শনই ছিল বিবেকানন্দের মুল আদর্শ।

এই কারনেই ১৮৯৬ সালের প্রারম্ভে নিউইয়র্কে শিক্ষার্থীদের সমাবেশে 'সাংখ্যীয় ব্রহ্মাণ্ডতত্ত্ব' শীর্ষক বক্তৃতাতে আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে প্রাচীন হিন্দুশাস্ত্রের তুলনা করতে গিয়ে তিনি ঘোষনা করলেন—“আপনারা দেখিবেন যে, কিরূপ আশ্চর্যভাবে আধুনিক বিজ্ঞানের সমুদয় আধুনিকতম আবিষ্ক্রিয়ার সহিত উহাদের সামঞ্জস্য রহিয়াছে; আর যদি কোথাও কিছু অপূর্ণতা থাকে, তাহা আধুনিক বিজ্ঞানের দিকেই।"[৩] অনেক পরে, এই ধরনের কথাবার্তার প্রতি বিরক্ত হয়েই বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা ১৩ই নভেম্বর ১৯৩৮ সালে মাসিক ভারতবর্ষ পত্রিকায় 'একটি নতুন জীবন দর্শন' শিরোনামে এক প্রবন্ধে অত্যন্ত ক্ষোভ ও কটাক্ষের সঙ্গে "সবই ব্যাদে আছে” এই উক্তিটি করেছিলেন। নবিংশ শতাব্দীর শেষভাগেই বিবেকানন্দ বুঝতে পেরেছিলেন যে আধুনিক বিজ্ঞান যে হারে এগুচ্ছে তাতে প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মগুলির ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা হতে চলেছে। তাই বোধহয় উপরোক্ত বক্তৃতাতে তিনি বলেন"ব্রহ্মাণ্ড সম্বন্ধে আধুনিক জ্যোতির্বিদ ও বৈজ্ঞানিকদের মতবাদ কি, তাহা আমরা জানি; আর ইহাও জানি যে, উহা প্রাচীন ধর্মতত্ত্ববাদিগণের কিরূপ ভয়ানক ক্ষতি করিয়াছে।"[৪] বিবেকানন্দের পক্ষে বুঝতে দেরি হয়নি যে ব্রাহ্মধর্ম, খ্রীষ্টানধর্ম এবং ক্রমবর্ধমান নাস্তিকতা থেকে ক্রমেই ক্ষয়িষ্ণু সনাতন ধর্মকে বাঁচাতে গেলে পালটা আক্রমণ ছাড়া পথ নেই। এবং সেক্ষেত্রে  বিজ্ঞানের বিকল্প হিসাবে বেদ ইত্যাদিকে তুলে ধরা ছাড়া কোনো উপায়ও নেই। তাই চিকাগো থেকে ২৩শে জুন ১৮৯৪ সালে মহীশুরের মহারাজাকে তিনি লিখলেন"আধুনিক বিজ্ঞান ধর্মের উপর যে পুনঃ পুনঃ তীব্র আক্রম করিতেছে, বেদই কেবল উহাকে বাধা দিতে পারে এবং ধর্মের সহিত বিজ্ঞানের সামঞ্জস্য বিধান করিতে পারে।"[৫] শুধু আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রেই নয়, বিজ্ঞানেও যে প্রাচীন ভারত ইউরোপ আমেরিকার থেকে বেশি অগ্রসর ছিল (নিঃসন্দেহে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এগিয়ে ছিলই, যেহেতু এই উপমহাদেশে সভ্যতার সঞ্চার আগে হয়েছে) এই দাবীর সপক্ষে বিবেকানন্দ কিছু যুক্তি দেন আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়াতে, ৮ই জানুয়ারী ১৯০০ সালে 'মনের শক্তি' শীর্ষক বক্তৃতা দেওয়ার সময়"ভারত যে বহু বিজ্ঞানের জন্মভূমি, তাহা তোমরা জান। গণিতের আরম্ভ সেখানে। আজ পর্যন্ত তোমরা সংস্কৃত গণনানুযায়ী ১, ২, ৩ হইতে ০ পর্যন্ত সংখ্যা গণনা করিতেছ। সকলেই জানে বীজগণিতের উৎপত্তিও ভারতে।"[৬]

প্রাচীন ভারতের সিদ্ধি নিয়ে তিনি যা বলেছেন তাতে নিশ্চয়ই কিছু সত্যি আছে, আবার বাড়াবাড়িও আছে। আসলে, ইতিহাসের অনেক কিছুর মতোই বীজগণিতেরও প্রথম আবিষ্কারককে খুঁজে বার করা খুব কঠিন কাজ। তবে ব্যাবিলন-মিশর-চীন-গ্রীস .... সব জায়গাতেই বীজগণিতের প্রাথমিক কিছু কাজকর্মের খোঁজ পাওয়া গেছে, সে সবই খ্রীষ্টপুর্ব যুগের কথা, এমনকি কোনও কোনোটা খ্রীষ্টপুর্ব দেড়-দুহাজার বছরের। সেই তুলনায় প্রখ্যাত ভারতীয় গণিতবিদদের মধ্যে আর্যভট্ট পঞ্চম-ষষ্ঠ, ব্রহ্মগুপ্ত সপ্তম ও দ্বিতীয় ভাস্করাচার্য দ্বাদশ শতকের মানুষ। আর আধুনিক বীজগণিতের কথাই যদি ধরতে হয়, তো সবার আগে আসবে নবম শতকীয় রবী গণিতজ্ঞ 'আল খোয়ারিজমি'-র নাম। এই আল খোয়ারিজমিকেই বলা হয় 'ফাদার অফ অ্যালজেবরা'। তাঁর লেখা প্রখ্যাত গণিতগ্রন্থ 'কিতাব আল মুহতাসর ফি হিসাব আল-জাবর ওয়াল মুকাবালা'-র মধ্যেকার 'আল জাবর' (Al-jabr) শব্দটা থেকে অ্যালজেবরা কথাটা এসেছে। 

অর্থাৎ, বিবেকানন্দ এক্ষেত্রে হয় জানতেন না, নাহলে সচেতনভাবেই তথ্যবিকৃতি করেছেন। এই ব্যাপারটি অর্থাৎ ভারতের বৈজ্ঞানিক ঐতিহ্য প্রমান করতে গিয়ে তিনি যাঁরা প্রকৃত বিজ্ঞানী ছিলেন অর্থাৎ সেই ব্রহ্মগুপ্ত, বরাহমিহির, র্যভট্ট, চরক অথবা শ্রুশ্রুতর নাম উচ্চারণ করলেন না, যা নিতান্তই স্বাভাবিক ছিল। পরিবর্তে অতি উৎসাহে বিবেকানন্দ বক্তৃতার পরবর্তী লাইনে যে দাবীটি করে বসলেন তা নিতান্তই হাস্যকর"আর নিউটনের জন্মের হাজার বছর আগে ভারতবাসীরা মাধ্যাকর্ষণের কথা জানিত।"[৭] কথাটির আক্ষরিক অর্থ ধরলে নিউটনের জন্ম ১৬৪২ এর হাজার বছর আগে ভারতে বিজ্ঞানী বলতে ছিলেন আর্যভট্ট, বরাহমিহির এবং ব্রহ্মগুপ্ত। গণিত এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিভিন্ন দিকে অসামান্য কৃতিত্বের অধিকারী হলেও এঁরা কেউই মহাকর্ষ বলের উপর চর্চা করেছিলেন বলে কোনো ঐতিহাসিক জানাননি। বরং আরও পাঁচশো বছর পর দ্বিতীয় ভাস্করাচার্য মহাকর্ষ জাতীয় একটি শক্তির অনুমান করে তা নিয়ে সামান্য অস্পষ্ট আলোচনা করেছিলেন। যদিও তাতে কোনো অঙ্কই ছিল না, সূত্র তো দুরের কথা। তাছাড়া কোনো একটা শক্তির অনুমান করা এবং গণিতের সাহায্যে তা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমান করে তাই থেকে সূত্র রচনা করা, যেটা নাকি নিউটন করে দেখিয়েছিলেন, দুটোর মধ্যে আকাশপাতাল তফাত।

এই প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা লিখেছিলেন"সুতরাং ভাস্করাচার্য বা কোনো হিন্দু, গ্রীক বা আরবী পণ্ডিত কেপলার-গ্যালিলিও বা নিউটনের বহুপুর্বেই মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্ব আবিস্কার করিয়াছেন, এরূপ উক্তি করা পাগলের প্রলাপ বই কিছুই নহে। দুঃখের বিষয় দেশে এইরূপ অপবিজ্ঞানপ্রচারকের অভাব নাই, তাঁহারা সত্যের নামে নির্জলা মিথ্যার প্রচার করিতেছেন মাত্র।"[৮] এক্ষেত্রে একটা কথাই বলতে পারি, প্রভাবশালী ধর্মপ্রচারক হতে গেলে ইতিহাস আর বিজ্ঞানের খুঁটিনাটি নিয়ে মাথা ঘামালে চলে না, এবং বিবেকানন্দ কোনোক্রমেই সে নিয়মের ব্যতিক্রম ছিলেন না।

নবিংশ শতকের মধ্যভাগ থেকেই বাঙালী মনীষীরা বিভিন্নভাবে আলোচনা করেছিলেন যে, শিক্ষা ও জ্ঞানার্জনের এমন সুবিশাল প্রাচীন ঐতিহ্য থাকা সত্ত্বেও ভারতের বিজ্ঞানচিন্তা কেন কাঙ্ক্ষিত উচ্চতায় পৌঁছায়নি। অনেকে এ নিয়ে আক্ষেপও করেছেন। যেমন অক্ষয়কুমারের মতে কোঁত ও বেকনের মতো দার্শনিকদের জন্ম হয়নি বলে ভারতে বৈজ্ঞানিক সংস্কৃতির প্রসার হয় নি। বঙ্কিমচন্দ্র প্রবল ধর্মবিশ্বাসী হয়েও এর জন্য দায়ী করছেন চরম ধর্মতাত্ত্বিক মনোভাবকে। বেদান্তদর্শন নিয়ে বিদ্যাসাগরের মনোভাবের কথা তো আগেই বলেছি। পরে প্রফুল্লচন্দ্রও বলেন যে ভারতের বৈজ্ঞানিক চিন্তা একসময় খুব উন্নত ছিল; কিন্তু দার্শনিক দিক থেকে শঙ্করাচার্য্যের মায়াবাদ এবং সামাজিক দিকে জাতিভেদের প্রাবল্যে ভারতের সেই সুবিশাল ঐতিহ্য ধীরে ধীরে তলিয়ে যায়। অথচ একই বিষয়ে যখন বিবেকানন্দ আলোচনা করতে বসেন, তিনি কিন্তু মতাদর্শগত বাধ্যবাধকতাতেই উপরোক্ত কারণগুলোকে দায়ী করতে পারেন নি। তার বদলে তিনি যেটা করলেন তা অনেকটা লালমোহন বাবুর (জটায়ু) গোয়েন্দাগিরির মতোআগে অপরাধীকে চিহ্নিত করে নিয়ে তার ঘাড়ে অপরাধটা চাপানোর ব্যর্থ প্রচেষ্টা। ২০ সেপ্টেম্বর ১৮৯২ সালে বোম্বে থেকে পণ্ডিত শঙ্করলালকে প্রদত্ত পত্রে বিবেকানন্দ লিখলেন"আমাদের দেশে পর্যবেক্ষণ ও সামান্যীকরণ প্রক্রিয়ার ফলস্বরূপ বিজ্ঞানসমূহের অত্যন্ত অভাব দেখিতে পাই। ইহার কারণ কি? ইহার দুইটি কারণ: প্রথমতঃ এখানে গ্রীষ্মের অত্যন্ত আধিক্য আমাদিগকে কর্মপ্রিয় না করিয়া শান্তি ও চিন্তা-প্রিয় করিয়াছে। দ্বিতীয়তঃ পুরোহিত ব্রাহ্মণেরা কখনই দূরদেশে ভ্রমণ অথবা সমুদ্রযাত্রা করিতেন না। সমুদ্রযাত্রা বা দূরভ্রমণ করিবার লোক ছিল বটে, তবে তাহারা প্রায় সবই ছিল বণিক; পৌরোহিত্যের অত্যাচার ও তাহাদের নিজেদের ব্যবসায়ে লাভের আকাঙ্ক্ষা, তাহাদের মানসিক উন্নতির সম্ভাবনা একেবারে রুদ্ধ করিয়াছিল। সুতরাং তাহাদের পর্যবেক্ষণের ফলে মনুষ্যজাতির জ্ঞানভাণ্ডার বর্ধিত না হইয়া উহার অবনতিই হইয়াছিল। কারণ, তাহাদের পর্যবেক্ষণ দোষযুক্ত ছিল, এবং তাহাদের প্রদত্ত বিবরণ এতই অতিরঞ্জিত ও কাল্পনিক হইত যে, বাস্তবের সঙ্গে তাহার মোটেই মিল থাকিত না।"[৯] অর্থাৎ গ্রীষ্মের আধিক্য, ব্রাহ্মণদের বিদেশভ্রমণ না করা, পুরোহিতদের অত্যাচার ও বণিকদের ব্যবসায়ে লাভের আকাঙ্খার ফলে ভারতের বৈজ্ঞানিক সাফল্য অর্জিত হয়নি।

এবার দেখা যাক বিবেকানন্দের প্রদত্ত অজুহাতগুলি কতদুর যুক্তিযুক্ত। প্রথমত, ব্রাহ্মণদের অত্যাচারের প্রসঙ্গটি নিশ্চয়ই সঠিক, কিন্তু মুল দার্শনিক এবং সামাজিক কারগুলিকে বাদ দিয়ে বিষয়টিকে দেখবার অর্থই হল অন্ধের হস্তিদর্শন। দ্বিতীয়ত, গ্রীষ্মের আধিক্যের কথাই যদি ধরি তাহলে তুলনামুক শীতল উত্তরাঞ্চল বা হিমাচল প্রদেশ অথবা মনোরম আবহাওয়াযুক্ত কেরালা বা কর্নাটক বৈজ্ঞানিক ঐতিহ্যের জন্য প্রসিদ্ধ হত। তৃতীয়ত, যতদূর জানি, বৈজ্ঞানিকরা "শান্তি ও চিন্তা-প্রিয়" হন বলেই দুর্দান্ত  সব আইডিয়া তাঁদের মাথায় আসে। চতুর্থত, বিজ্ঞানের ইতিহাস বলে, সারা পৃথিবীতে বণিকদের "ব্যবসায়ে লাভের আকাঙ্ক্ষা"ই হল বিজ্ঞানের উদ্ভব ও প্রসারের কারণ—মিশর, ইউরোপ, চীন, আমেরিকা সবদেশেই এটি শাশ্বত সত্য। এইভাবে কৌশলে মুল সমস্যা থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেওয়ার যথেষ্ট কার ছিল বিবেকানন্দের। প্রথমত, তিনি শঙ্করাচার্য্যের অনুসারী; তাই মায়াবাদকেই ভারতীয় বিজ্ঞানের অধঃপতনের কার বলে তিনি মানতে নারাজ। দ্বিতীয়ত, তিনি ধর্মীয় নেতা; তাই ধর্মতাত্ত্বিক মনোভাবের ত্রুটির কারটিও তিনি মানতে পারেন না। আবার প্রাচীন সংস্কারের অনুরাগী হওয়ায় জাতিভেদ ব্যবস্থাকেও সরাসরি তিনি দায়ী করতে পারেন নি। অতএব, শাক দিয়ে মাছ ঢাকার ব্যবস্থা।

শুধু একবার নয়, অনত্রও বিবেকানন্দ ভারতের বৈজ্ঞানিক ঐতিহ্যের অধঃপতনের কারন হিসাবে নুতন নুতন হাস্যকর অজুহাত খুঁজেছেন। ক্যালিফোর্নিয়াতে, ৮ই জানুয়ারী ১৯০০ সালে 'মনের শক্তি' শীর্ষক বক্তৃতাতে তিনি বোঝাবার চেষ্টা করলেন যে নিউটনের জন্মের হাজার বছর পুর্বে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির তথাকথিত আবিষ্কারের পর ভারতীয় বিজ্ঞানচর্চার দিশা বদলে যাওয়ার কারণ—"ভারতের ইতিহাসে এমন একটি যুগ ছিল, যখন শুধু মানুষ ও মানুষের মন—এই একটি বিষয়ে ভারতের সমগ্র মনোযোগ আকৃষ্ট হইয়াছিল, তাহাতেই সে তন্ময় হইয়া গিয়াছিল। যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করিলে মনের অসাধ্য কিছুই নাই—এই বিষয়ে ভারতীয় মনে এতখানি দৃঢ়বিশ্বাস আসিয়াছিল যে, মনঃশক্তির গবেষণাই তাহার মহান লক্ষ্য হইয়া দাঁড়াইয়াছিল। তাঁহাদের নিকট সম্মোহন, যাদু ও এই জাতীয় অন্যান্য শক্তিগুলির কোনটিই অলৌকিক মনে হয় নাই। ইতঃপূর্বে ভারতীয়েরা যেভাবে যথানিয়মে জড়বিজ্ঞানের শিক্ষা দিতেন, তখন তেমনি যথা নিয়মে এই বিজ্ঞানটিও শিখাইতে লাগিলেন। এ বিষয়ে জাতির এত বেশী দৃঢ়-প্রত্যয় আসিয়াছিল যে, তাহার ফলে জড়বিজ্ঞান প্রায় লুপ্ত হইয়া গেল। তাহাদের দৃষ্টি নিবন্ধ রহিল শুধু এই একটি লক্ষ্যে।"[১০] "বিভিন্ন সম্প্রদায়ের যোগীরা বিবিধ পরীক্ষার কাজে লাগিয়া গেলেন। কেহ পরীক্ষা করিতে লাগিলেন আলো লইয়া; বিভিন্ন বর্ণের আলোক কিভাবে শরীরে পরিবর্তন আনে, তাহা আবিষ্কার করিবার চেষ্টা করিতে লাগিলেন। তাঁহারা একটি বিশেষ বর্ণের বস্ত্র পরিধান করিতেন, একটি বিশেষ বর্ণের ভিতর বাস করিতেন, এবং বিশেষ বর্ণের খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করিতেন। এইরূপে কত রকমের পরীক্ষাই না চলিতে লাগিল। অপরে কান খুলিয়া রাখিয়া ও বন্ধ করিয়া, শব্দ লইয়া পরীক্ষা চালাইতে লাগিলেন। তাছাড়া আরও অনেকে গন্ধ এবং অন্যান্য বিষয় লইয়াও পরীক্ষা চালাইতে লাগিলেন।"[১১] "সব-কিছুরই লক্ষ্য ছিল মূলে উপস্থিত হওয়া, বিষয়ের সূক্ষ্মভাগগুলিতে গিয়া পৌঁছানো। তাঁহাদের মধ্যে অনেকে সত্যই অতি অদ্ভুত শক্তির পরিচয়ও দিয়াছেন। বাতাসের ভিতর ভাসিয়া থাকিবার জন্য, বাতাসের মধ্য দিয়া চলিয়া যাইবার জন্য অনেকেই চেষ্টা করিতেছিলেন।"[১২]

এত সব তুমুল পরীক্ষানিরীক্ষার পর কি পাওয়া গেল? যোগী বিজ্ঞানীরা কি আবিষ্কার করলেন? না, শূন্যে ভেসে থাকা, শূন্যে হাত ঘুরিয়ে ফলমুল বার করা, পকেটের কাগজে কি লেখা আছে তা বলতে পারা ..... ইত্যাদি ইত্যাদি। অর্থাৎ, যে ঘটনাগুলি সাধারণত যাদু, মাদারির খেলা বা বুজরুকি বলে পরিগণিত হয়, বিবেকানন্দের মতে সেগুলিতে এক্সপার্ট হওয়ার জন্য তথাকথিত যোগীরা জড়বিদ্যার চর্চাকে জলাঞ্জলি দিয়ে পরাবিদ্যার চর্চাকে আপন করে নিলেন! বিবেকানন্দের মতে"এ-জাতীয় ঘটনা অলীক, এমন কথা ভারতে কেহই বলিবে না। হিন্দুদের কাছে ইহা স্বাভাবিক ঘটনা।"[১৩] কারন "এটি জাতির এক চরম বিশ্বাস।"[১৪] চিন্তা করুন, কোনটি বিজ্ঞান আর কোনটি অপবিজ্ঞান তার সত্যতা নির্ধারিত হবে একটি জাতির "চরম বিশ্বাস"এর নিরিখে!  স্পষ্টতই এখানে বিবেকানন্দ জড়বিজ্ঞানের চর্চা ছেড়ে যাদুবিদ্যার চর্চা শুরু করবার প্রবণতার নিন্দা করবার পরিবর্তে তাকে যুক্তিসঙ্গত বলেই প্রতিপন্ন করতে চেয়েছেন!

এই প্রসঙ্গে আরও একটি উদাহরণ মনে পড়ছে। ১৮৯৮ সালে কলকাতায় অবস্থানকালে বিবেকানন্দ নিবেদিতা এবং অপরাপর শিষ্যদের নিয়ে একবার আলিপুর চিঁড়িয়াখানায় বেড়াতে যান। সেখানে পশুশালার তদানীন্তন সুপারিণ্টেণ্ডেণ্ট রায় বাহাদুর রামব্রহ্ম সান্যালের সাথে বিবেকানন্দের ডারউইনের বিবর্তনবাদ নিয়ে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হয়। রায়বাহাদুরকে বিবেকানন্দ বলেন"ডারইনের কথা সঙ্গত হলেও evolution (ক্রমবিকাশবাদ)-এর কারণ সম্বন্ধে উহা যে চূড়ান্ত মীমাংসা, এ কথা আমি স্বীকার করতে পারি না।"[১৫] বিবেকানন্দের এইরূপ সিদ্ধান্তের কার হিসাবে তিনি যা বললেন তা হল"সাংখ্যদর্শনে ঐ বিষয় সুন্দর আলোচিত হয়েছে। ভারতের প্রাচীন দার্শনিকদিগের সিদ্ধান্তই ক্রমবিকাশের কারণ সম্বন্ধে চূড়ান্ত মীমাংসা বলে আমার ধারণা।"[১৬] এবং "নিম্ন জাতিকে উচ্চ জাতিতে পরিণত করতে পাশ্চাত্য মতে struggle for existence (জীবন-সংগ্রাম), survival of the fittest (যোগ্যতমের উদ্বর্তন), natural selection (প্রাকৃতিক নির্বাচন) প্রভৃতি যে-সকল নিয়ম কারণ বলে নির্দিষ্ট হয়েছে, পাতঞ্জল-দর্শনে কিন্তু এ-সকলের একটিও তার কারণ বলে সমর্থিত হয়নি।"[১৭] অতএব বিবেকানন্দের মতে"মানবের সর্বশ্রেষ্ঠ evolution (পূর্ণবিকাশ) একমাত্র sacrifice (ত্যাগ) দ্বারা সাধিত হয়।"[১৮] বিজ্ঞানের তত্ত্ব ততক্ষণই গ্রহনযোগ্য যতক্ষণ তা দিয়ে ধর্মশাস্ত্রের যথার্থতা প্রতিপন্ন করা যায় .... এই হল বিবেকানন্দের 'বিজ্ঞানমনস্কতার' সার কথা।

এখন প্রশ্ন হল বিবেকানন্দের বিজ্ঞানচিন্তা নিয়ে আজ একশো বছর পরে এত আলোচনা কেন? ইদানিং ভারতের বৈদিক যুগের বিজ্ঞানচর্চার বিষয়ে একটি প্রভাবশালী অংশ থেকে এমন কিছু দাবী করা হচ্ছে যা রীতিমত অবাস্তব ও অনৈতিহাসিক। বেদ-পুরাণ-রামায়ন-মহাভারত ইত্যাদির কিছু কাল্পনিক কাহিনীকে বাস্তব এবং বিজ্ঞানসম্মত প্রমান করবার প্রাণপন চেষ্টা চলছে গত কয়েক বছর ধরে। এই কাজগুলি মুলত যে সংগঠন করছে তারাই আবার বিবেকানন্দকে তাদের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর মনে করেন। এবং তাদের তথাকথিত বিজ্ঞানভাবনার সাথে বিবেকানন্দের বিজ্ঞানচিন্তার বিশেষ অমিল নেই। এই প্রসঙ্গে কয়েকটি উদাহরণ দিলেই বিষয়টি বোধগম্য হবে। (১) মহাভারতের সঞ্জয় ধৃতরাষ্ট্রকে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের যে বর্ণনা দিয়েছিলেন তা দিব্যদৃষ্টিরূপী টেলিভিনের মাধ্যমে। (সূত্র: দীননাথ বাত্রা) (২) বৈদিক যুগেও মটরগাড়ির অস্তিত্ব ছিল। এর নাম ছিল অনাশ্ব রথ, মানে যে রথ অশ্ব টানতো না, যন্ত্রে চলতো। (সূত্র: দীননাথ বাত্রা) (৩) মহাভারতে গান্ধারীর অ্যাবরশন করানো হয় এবং তাঁর গর্ভ থেকে এক বিশাল বড়ো মাংসের তাল বেরিয়ে আসে। ব্যাসদেব কিছু বিশেষ ওষুধ প্রয়োগ করে সেই মাংসপিণ্ডটা একটা ঠান্ডা জায়গায় প্রিজার্ভ করেন। পরে তিনি ওটাকে ১০০ টুকরো করে ১০০টি ঘি এর ডাব্বার মধ্যে দুইবছর চুবিয়ে রাখেন। দুইবছর পরে ১০০ কৌরবের জন্ম হয়। (সূত্র: দীননাথ বাত্রা) (৪) গনেশের হাতির মাথা প্রমান করে যে বৈদিক যুগে ভারতের শল্যচিকিৎসাবিদ্যায় উন্নতি যাতে মানুষের শরীরে হাতির মাথা প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হয়েছিল কসমেটিক সার্জারির সাহায্যে। (সূত্র: প্রধানমন্ত্রী) (৫) মহাভারতের কর্ণের জন্মকাহিনী প্রমান করে বৈদিক ভারতে টেষ্টটিউব বেবি তৈরীর কৌশল জানা ছিল। (সূত্র: প্রধানমন্ত্রী) (৬) রামায়ণে বর্ণিত পুষ্পক রথ হল ভারতে তৈরি পৃথিবীর প্রথম এরোপ্লেন এবং তা নিয়ে পড়ানো হোক আইআইটি তে। (সূত্র: মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী) (৭) রামায়ণে বর্ণিত রাক্ষসপুরী লঙ্কায় জল ছাড়া গাছ বাঁচত। তাদের বাঁচিয়ে রাখত চন্দ্রমণি নামে অমৃত। সেই চন্দ্রমণি আবিষ্কারের চেষ্টা করা প্রয়োজন। (সূত্র: মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী) (৮) ডারউইনের বিবর্তনবাদের তত্ত্ব বৈজ্ঞানিকভাবে ভ্রান্ত কারন আমরা তো বটেই এমনকি আমাদের পুর্বপুরুষরাও কোনো বানরকে মানুষে পরিবর্তিত হতে দেখেননি। (সূত্র: মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী) (৯) আইজ্যাক নিউটনের অনেক আগেই প্রাচীন মন্ত্রের মধ্যেই ছিল গতিসূত্র। (সূত্র: মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী) (১০) এবং সর্বশেষে, হকিং বলেছিলেন, বেদের তত্ত্বগুলি সম্ভবত আইনস্টাইনের বিখ্যাত ‘e=mc2’ সূত্রটির চেয়েও উন্নত। (সূত্র: বিজ্ঞান মন্ত্রী)

সমস্যা হল, এনারাও একই রকম বিজ্ঞানমনস্কতার মুখোশ পরে ওই ভ্রান্ত ধারণাগুলিকে সমর্থন করেন বা বিজ্ঞানের সাথে অলৌকিকতার ককটেল বানিয়ে বাজারে ছেড়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এইসব উদ্ভট অপরিশীলিত অনতিশিক্ষিত মিথ্যে ধরা পড়ে যায়, কিন্তু অনেক সময়েই আবার এত চতুরতার সাথে বিজ্ঞান ও অবিজ্ঞানের মিশেল দেওয়া হয় যে তাতে অনেক বিজ্ঞানমনস্ক ব্যক্তিও প্রতারিত হন। একথা কেউ অস্বীকার করেন না যে প্রাচীন ভারত সে যুগের মাপকাঠিতে জ্যোতির্বিজ্ঞানে, গণিতচর্চায় অথবা শল্য চিকিৎসায় যথেষ্ঠ সাফল্যের পরিচয় দিয়েছিল। কিন্তু তার মানে এই নয় যে তিলকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তাল বলে পরিবেশন করা হবে আর আমাদের সেটা প্রফুল্লবদনে মেনে নিতে হবে।

তাঁরা জানেন, এই সব প্রশ্নে বিভিন্ন জায়গা থেকে বারংবার মিথ্যা বলে চললে এক সময় তা সত্যির মতো শোনায়। আসলে এদের উদ্দেশ্য খুব সরল। তা হল, ধর্মভিত্তিক উগ্র দেশপ্রেম জাগিয়ে তোলা যাতে মানুষ তাদের দৈনন্দিন বঞ্চনাকে ভুলে থাকতে পারে। এই উদ্দেশ্য যদি সফল হয় তা হবে ভারতের ক্রমবর্ধমান যুক্তিবাদী সংস্কৃতির উপর বিশাল কুঠারাঘাত। পাঠকপাঠিকাগণ উপরোক্ত দাবীগুলির নিদেনপক্ষে কয়েকটির মধ্যে কোথাও কি আপনারা বিবেকানন্দের বিজ্ঞানভাবনার ছায়া দেখতে পাচ্ছেন?

তথ্যসূত্র

১) বিবেকানন্দের বিজ্ঞানচিন্তা, গণশক্তি ৬ই জানুয়ারি ২০১৩।

২) বিদ্যাসাগর ও বাঙালী সমাজ, বিনয় ঘোষ, ওরিয়েন্ট ব্ল্যাকসোয়ান, অখন্ড সংস্করণ ১৪১৭, পৃষ্ঠা ৫২৬ ।

৩) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, তৃতীয় খণ্ড; উদ্বোধন কার্যালয়, প্রথম সংস্করণ ১৩৬৭, পৃষ্ঠা ১৪

৪) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, তৃতীয় খণ্ড; উদ্বোধন কার্যালয়, প্রথম সংস্করণ ১৩৬৭, পৃষ্ঠা ১৪  

৫) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, ষষ্ঠণ্ড; উদ্বোধন কার্যালয়, প্রথম সংস্করণ ১৩৬৭, পৃষ্ঠা ৪৪১

৬) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, তৃতীয় খণ্ড; উদ্বোধন কার্যালয়, প্রথম সংস্করণ ১৩৬৭, পৃষ্ঠা ৪১২ 

৭) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, তৃতীয় খণ্ড; উদ্বোধন কার্যালয়, প্রথম সংস্করণ ১৩৬৭, পৃষ্ঠা ৪১২ 

৮) মেঘনাদ রচনা সংকলন, ওরিয়েন্ট লংম্যান, প্রথম সংস্করণ, ১৯৮৬, পৃষ্ঠা ১৬১

৯) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, ষষ্ঠণ্ড; উদ্বোধন কার্যালয়, প্রথম সংস্করণ ১৩৬৭, পৃষ্ঠা ৩৪১

১০) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, তৃতীয় খণ্ড; উদ্বোধন কার্যালয়, প্রথম সংস্করণ ১৩৬৭, পৃষ্ঠা ৪১২                                                                                                                          

১১) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, তৃতীয় খণ্ড; উদ্বোধন কার্যালয়, প্রথম সংস্করণ ১৩৬৭, পৃষ্ঠা ৪১২-১৩ 

১২) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, তৃতীয় খণ্ড; উদ্বোধন কার্যালয়, প্রথম সংস্করণ ১৩৬৭, পৃষ্ঠা ৪১৩ 

১৩) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, তৃতীয় খণ্ড; উদ্বোধন কার্যালয়, প্রথম সংস্করণ ১৩৬৭, পৃষ্ঠা ৪১৩ 

১৪) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, তৃতীয় খণ্ড; উদ্বোধন কার্যালয়, প্রথম সংস্করণ ১৩৬৭, পৃষ্ঠা ৪১৩ 

১৫) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, নবমণ্ড; উদ্বোধন কার্যালয়, প্রথম সংস্করণ ১৩৬৭, পৃষ্ঠা ১১৯

১৬) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, নবমণ্ড; উদ্বোধন কার্যালয়, প্রথম সংস্করণ ১৩৬৭, পৃষ্ঠা ১১৯

১৭) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, নবমণ্ড; উদ্বোধন কার্যালয়, প্রথম সংস্করণ ১৩৬৭, পৃষ্ঠা ১২০

১৮) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, নবমণ্ড; উদ্বোধন কার্যালয়, প্রথম সংস্করণ ১৩৬৭, পৃষ্ঠা ১২২

 

কৃতজ্ঞতা স্বীকার:

'অন্য কোনো সাধনার ফল' এবং  'স্বামী বিবেকানন্দ ও বাঙালীর সেকিউলার বিবেক'

- আশীষ লাহিড়ী।                                                         

 

 

লেখক পরিচিতি

শিবাশীষ বসু
শিবাশীষ বসু
প্রাবন্ধিক, ইতিহাস-অন্বেষক
0 Comments
Leave a reply